রবিবার, ০১ Jun ২০২৫, ০১:৪০ পূর্বাহ্ন
সাভার ও ধামরাই উপজেলার চারশতাধিক অবৈধ ইটভাটা অভিযানের পরও রহস্যজনক কারণে বন্ধ হচ্ছে না। বরং প্রতি বছরই গড়ে উঠছে নতুন নতুন ইটের ভাটা। যদিও স্থানীয়দের অভিযোগ প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে এ ইটভাটাগুলো। এর বিপরীতে পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের সামর্থ্য না থাকার কথা স্বীকার করলেও উপজেলা প্রশাসনের দাবি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ওইসব ভাটার বিরুদ্ধে।
ঢাকার উত্তরের দুই উপজেলা সাভার ও ধামরাই। ভৌগলিক অবস্থার কারণেই এ অঞ্চলটি ইটভাটা মালিকদের কাছে বেশ পছন্দনীয়। সেই পছন্দই গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয়দের কাছে। সবুজ গ্রামগুলো রূপ নিয়েছে ধূসরে। দিনে দিনে হারিয়েছে গ্রামের ঐতিহ্য আর চিরচেনা রূপ। নষ্ট হয়েছে ফসলি জমি আর কমেছে উৎপাদন। এসব নিয়ে দীঘদিন ধরে বিরক্ত স্থানীয়রা। তারা দ্রুত উচ্ছেদ চান অবৈধ ইটভাটাগুলো।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সাভার উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ফসলি জমির ওপর গড়ে উঠেছে ২০টিরও অধিক ইটভাটা। কোনোটারই নেই বৈধতা। স্কুল-মসজিদ আর বসতবাড়ি ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে ভাটাগুলো। পাশেই মজুত করে রেখেছে পোড়ানোর জন্য কাটা গাছ। ধামরাই উপজেলায়ও একই চিত্র।
সাভার উপজেলার হিসাব বলছে, সাভার রাজস্বের আওতায় ১৫৪টি ইটভাটা রয়েছে আর আশুলিয়া রাজস্বের আওতায় রয়েছে ৭০টি ভাটা। সাভার উপজেলার মোট ভাটার সংখ্যা দাঁড়ায় ২২৪টি। আর ধামরাই উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা আড়াই শতাধিকেরও বেশি। যেগুলোর বেশিরভাগেরই নেই কোনো অনুমোদন। প্রশাসনের সঙ্গে ম্যানেজ করেই চলছে সবকয়টি ইটভাটা। সম্প্রতি সাভার পৌর এলাকার পরিবেশ দূষণ করে অবৈধভাবে ইটভাটা তৈরি করে ইট প্রস্তুত করার অভিযোগে চারটি ইট ভাটায় অভিযান পরিচালনা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
এসময় কর্ণফুলী ব্রিকসকে নগদ পাঁচ লাখ, এখলাছ ব্রিকসকে বিশ লাখ, মুধুমতি ব্রিকসকে পাঁচ লাখ ও ফিরোজ ব্রিকসকে পাঁচ লাখসহ মোট সর্বমোট ৩৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। কিছু অংশ ভেঙে দিতেও দেখা যায়। এর কয়েকদিন পর থেকে পুনরায় চালু হয় এই ইট ভাটাগুলো। শুধু এ চারটি ভাটাই নয়, সাভার ও ধামরাইয়ের যেসব ভাটায় অভিযান হয় তার সব কয়টিতেই উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর।
ধামরাইয়ের এমবিসি ইট ভাটার ম্যানাজার কামাল হোসেন বলেন, সবভাটাই চলছে এক সূত্রে। মালিক সমিতি নির্ধারণ করে দেন কাকে কত দেবে। এটা মালিকদের ব্যাপার। উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোক সবাই জানে বিষয়টি।
এ কথার মাঝে থামিয়ে দেন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আতাহার নামের আরেক ব্যক্তি। তিনি বলেন, সাংবাদিক-পুলিশ সবাই আসে। এসব নিয়ে বেশি কথা না বলাই ভালো।
এমবিবি ইটভাটার এক কর্মকর্তা বলেন, ২৫০ ভাটার মালিকরা ৫০ হাজার করে সিজনের শুরুতে মালিকদের কাছ থেকে তুলে নেন। যা দিয়ে লোকাল প্রশাসন ম্যানেজ করা হয়। আর পরিবেশ অধিদপ্তর আর ভ্যাট অফিস কাগজ কলমে কিছু টাকা নিলেও এর দশগুণ বেশি টাকা নিয়ে থাকেন ম্যানেজ হওয়ার জন্য। এভাবেই চলছে ভাটাগুলো।
যদিও ওই কর্মকর্তার কথাকে উড়িয়ে দেন ধামরাই ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, একটি টাকাও কাউকে দেওয়া হয় না।
তাহলে কেমন করে চালাচ্ছেন এমন অবৈধ ভাটা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দেখা কইরেন আমার সঙ্গে। এ বলে মুঠোফোনের সংযোগ বিছিন্ন করে দেন।
বিভিন্ন ভাটা ঘুরে জানা যায়, আগে থেকেই অভিযানের খবর জানতে পারেন ভাটা মালিকরা। ২-১টিতে অভিযান চালালেও বাকিগুলো উৎপাদন চালান প্রকাশ্যে।
অভিযান নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয়দের মাঝেও। তেমন একজন সুজন মিয়া।
তিনি বলেন, অভিযানের সময় বড় বড় ড্রেজার নিয়ে আসেন। কিন্তু ভাটার চিম্নি ঠিক রেখে, চুল্লির কিছু অংশ ভেঙে জরিমানার টাকা নিয়ে চলে যান। যখনই চলে যান তখন থেকেই তা ঠিক করে পূণরায় উৎপাদন শুরু করেন মালিকরা।
অভিযানের পরও কিভাবে চলে ইটভাটা? এমন প্রশ্নে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জহির ইসলাম তালুদার বলেন অসহায়ত্বের কথা।
তিনি বলেন, পর্যাপ্ত লোকজন ও চিম্নি ভাঙার ব্যবস্থা না থাকায় অভিযানের পরও ভাটা মালিকরা ভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে কী বা করার আছে?
বিষয়টি নিয়ে সঙ্গে কথা হয় ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকীর। তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযানে এলে তাদের সহয়তা করে উপজেলা প্রশাসন। এছাড়াও অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।